একুশে ফেব্রুয়ারী (21 february Eassy)
সূচনাঃ-
একুশে ফেব্রুয়ারী (21 february) বাঙালি জাতির জীবনে একটি বিশেষ স্মরণীয় দিন। মাতৃভাষা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে ছাত্রসমাজ এই দিনে আন্দোলন শুরু করে। এ দিনে ঘটে যাওয়া ইতিহাস রক্তে লেখা ইতিহাস। তাই ফেব্রুয়ারীর গান রক্তে লেখা –
“ আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারী
আমি কি ভুলিতে পারি।”
এর সাথে আমাদের গৌরব ও বেদনার ইতিহাস জড়িত।
পটভূমিঃ-
১৯৪৭ সালের ১৪ ও ১৫ ই আগষ্ট যথাক্রমে পাকিস্তান ও ভারত নামে দুটি রাষ্ট্র সৃষ্টি হয়। পাকিস্তানের দুটি অংশ- একটি পশ্চিম পাকিস্তান আরেকটা পূর্ব পাকিস্তান অর্থাৎ আজকের বাংলাদেশ । তবে শাসনক্ষমতা ছিল পশ্চিম পাকিস্তানিদের হাতে। তারা উভয় পাকিস্তানের রাষ্টভাষা উর্দু করার ঘোষণা দেয়। কিন্তু বাঙালিরা এ অঞ্চলের রাষ্ট্রভাষা বাংলা করার দাবি জানায়। অবশ্য রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ১৯৪৮ সালেই আন্দোলন শুরু হয়। এর চুড়ান্ত রূপ নেয় ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারী।
একুশে ফেব্রুয়ারী ঘটনাঃ-
১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারী অনুষ্ঠিতব্য প্রদেশিক পরিষদের অধিবেশন সামনে রেখে সাবা দেশে বাংলা ভাষার মর্যাদা পতিষ্ঠার দাবিতে ধর্মঘট আহবান করা হয়। এদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ এলাকায় সরকার ১৪৪ ধারা জারি করে। সভাসমিতি ও মিটিং মিছিল নিষিদ্ধ করে। সরকারের অন্যায় অত্যাচারের প্রতিবাদে ছাত্ররা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে প্রতিবাদ মিছিল বের করলে পুলিশ মেডিকেল কলেজের সামনে ছাত্রদের ওপর বেপোয়ারাভাবে গুলি-বর্ষণ করে। এতে সালাম, বরকত, রফিক, জব্বারসহ আরো অনেক ছাত্র ( যাদের নাম যানা যায়নি ) শহীদ হন।
রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতিঃ-
এ জঘন্য হত্যাকান্ডের খবর সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়লে, সারা বাংলাদেশ প্রচন্ডভাবে বিক্ষুব্দ হয়ে উঠে। পরবর্তীতে সরকার বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হয়।
আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা দিবসঃ-
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ১৯৯৯ সালে এ দিনকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোসণা করে। তারপর থেকে প্রতিবছর সারা বিশ্বে ২১শে ফেব্রুয়ারী দিনটি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। এটা আমাদের জন্য আনন্দ ও গৌরবের বিষয়।
একুশে ফেব্রুয়ারীর কবিতা ও গানঃ-
১৯৫২ সাল থেকে আজ পর্যন্ত দীর্ঘ ৬০ বছরে একুশে ফেব্রুয়ারীকে নিয়ে অসংখ্য কবিতা ও গান লেখা হয়েছে। বাংলার সকল কবি, সাহিত্যিক, গীতিকার, ছড়াকার, পলি−কবি এমন কেউ নেই যিনি ভাষা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে কবিতা ও গান রচনা করেন নি। আবদুল গাফফার চৌধুরী বায়ান্ন সালে লিখলেন তার কালজয়ী কবিতা-
“ আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারী ,
আমি কি ভুলিতে পারি,
“ ছেলেহারা শত মায়ের অশ্রু গড়া এ ফেব্রুয়ারী
আমি কি ভুলিতে পারি।”
আরো লেখা হল :
“ তোরা ঢাকা শহর ভাসাইলি।
ফেব্রুয়ারী তাৎপর্যঃ-
বাঙালির জাতীয় জীবনে একুশে ফেব্রুয়ারী কোনো আকস্মিক ঘটনা কিংবা সাধারণ ঘটনা নয়। এর জন্য আমাদের শত জীবন দিতে হয়েছে। এর অন্তনিহিত তাৎপর্য অপরিসীম।
উপসংহারঃ-
অমর একুশে ফেব্রুয়ারী আমাদের জাতীয় জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। এটা গোটা বাঙালি জাতিকে বিশ্বের দরবারে অনেক উচুঁ আসনে নিয়ে গেছে। আমাদের জাতীয় পতাকা ও ভাষা বিশ্বে একটি বিশেষ স্থান করে নিতে সক্ষম হয়েছে।
You may also like to read “Computer | কম্পিউটার প্রবন্ধ“